শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন

আপডেট
কমলা বাগান করে সফল কৃষক আতাউর রহমান  

কমলা বাগান করে সফল কৃষক আতাউর রহমান  

নীলফামারী প্রতিনিধি: বাগান জুড়ে গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে কাঁচা পাকা কমলা। এমন দৃশ্য দেখলেই মনে হবে এটি চিন, ভারত বা অন্য কোন দেশের। কিন্তু না গাছ ভরা ফলের এই বাগানটির অবস্থান বাংলাদেশেই। তবে সিলেট বা পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার নয়। বরং দেশের উতরাঞ্চলের নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার উত্তর সোনাখুলি ধনীপাড়া গ্রামে।  এখানে মিজানুর রহমানের ছেলে আতাউর রহমান গড়ে তুলেছেন এই বাগান। বাড়ির পাশে ৩০ শতক জমিতে মাটি ভরাট করে লাগানো গাছে পর্যাপ্ত ফলন হওয়ায় সফল কৃষক হিসেবে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিগত ৩ বছর ধরে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রি করে আসছেন। আগামিতে প্রতি বছর ২ থেকে ৪ লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আতাউর।
আতাউর রহমানের বাবা মিজানুর রহমান জানান, ছেলে ইউটিউবে দেখতে পায় চুয়াডাঙ্গার এক চাষি কমলা ফলের বাগান করে লাভবান হয়েছেন। এরপরেই ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৬০টি ছোট গাছ সংগ্রহ করে বাড়ির পাশে ৩০ শতক জমিতে মাটি ভরাট করে চারা রোপন করে। প্রায় ২ বছর পরিচর্যা করে গত ২০২১ সাল থেকে ফলন শুরু হয়।  প্রথম বছর পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করে। ২০২২ সালে দেড় লাখ ও চলতি  ২০২৩ সালে এখন পর্যন্ত ১ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছে। আগামী ২ মাসে আরো প্রায় ২ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।  তিনি বলেন, ৩০ শতক জমিতে কমলার চাষ করে লাভের মুখ দেখে আতাউর রহমান আরো প্রায় ১ বিঘা জমিতে ১০৫ টি গাছ লাগিয়েছে। রোপনকৃত গাছগুলোয় ফল ধরা শুরু হলে আগামীতে প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করার সম্ভবনা রয়েছে।
ওই এলাকার আলম বাবু জানান, সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা করলে দেশের মাটিতেই যে ভালো মানের কমলার চাষ করা যায় তার প্রমান আতাউর রহমান। বেকার যুবকরা বুদ্ধি খাটিয়ে এমন বাগান করলে দেশের বেকারত্ব সমস্যা চিরতরে ঘুচে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।  শুক্রবার সরেজমিনে বাগানে গেলে দেখা যায় সৈয়দপুর, নীলফামারী সহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসেছেন বাগান দেখতে ও তাজা কমলা কিনতে। এসময় মাহদী নামে একজন বলেন, শুনেছি এই বাগানের কমলার দাম কম এবং বেশ মিষ্টি। তাই সকাল সকাল বাগানের মালিকের কাছে থেকে কমলা নিতে এসেছি। গাছ থেকে তাজা কমলা নিজ হাতে ছিঁড়ে খেয়েছি। স্বাদ মোটামুটি ভালো। রসও প্রচুর। খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি।
আলেফ নামে আরেক জন বলেন, এখানে এসে কমলার বাগান দেখে বেশ ভালো লাগলো। থোকায় থোকায় কাঁচা পাকা গাছভর্তি ফল। যেন সিলেট বা দার্জিলিং এর কোথাও এসেছি। তিনি আরও বলেন,  বাজারের তুলনায় দাম কম। মাত্র ১শ’ টাকা কেজি। তাছাড়া টাটকা ও বিষমুক্ত। তাই ৫ কেজি কিনে নিয়েছি। এখন থেকে বাগানে এসে নিয়মিত কমলা নিয়ে যাবো এবং পরিচিতদেরকেও বলবো।
আতাউর রহমান বলেন, বাবার জমি জায়গা আছে কিন্তু আমি ছিলাম বেকার। ২০১৯ সালে  ইউটিউবে কমলা চাষে সফল চুয়াডাঙ্গার এক চাষির প্রতিবেদন দেখেই আগ্রহ জাগে। এর পরেই উদ্যোগ নেই বাগান করার। মাটি, সার ও ঔষধ দিয়ে বাগানটি তৈরি করে চুয়াডাঙ্গা থেকে গাছ সংগ্রহ করে লাগাই। এরপর যথাযথ পরিচর্যা করায় অল্প সময়েই ভালো ফলন পেয়েছি। এতে কমলা বাগান করে নিজেকে সার্থক মনে করছেন তিনি।  এবিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভুষন রায় বলেন, সৈয়দপুরে কমলার বাগান এবং তাতে আশানুরূপ ফল পাওয়ার বিষয়টি আসলেই খুশির ও সাফল্যের।  তিনি ফল বাগানের উদ্যোক্তা আতাউর রহমানকে সার্বিক সহযোগিতার প্রদানের কথা জানান।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |